1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

রাজনীতির মঞ্চেই লড়াই হবে, নন্দীগ্রামে চ্যালেঞ্জ শুভেন্দুর, পাল্টা ‘মিরজাফর’ বলে আক্রমণ ফিরহাদের

  • Update Time : বুধবার, ১১ নভেম্বর, ২০২০
  • ৩৩২ Time View

বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:সেই নন্দীগ্রামের মাটিই আবার হয়ে উঠল রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। রাজনৈতিক লড়াইয়ের মাটিতেই দেখা হবে বলে মঙ্গলবার নন্দীগ্রাম থেকে নাম না করে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের দাপুটে নেতা শুভেন্দু অধিকারী। আর শুভেন্দুকেও নাম না করে ‘মিরজাফর’ বলে ভয়ঙ্কর কটাক্ষ করে জবাব দিলেন রাজ্যের আরেক মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। ফলে তৃণমূলে শুভেন্দু বিয়োগের যাত্রা শুরু হয়ে গেল রাজনীতি পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।

পশ্চিমবাংলার রাজনীতিতে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রাম দিবসে নন্দীগ্রামের মাটিতেই সেই বিতর্ক চরম আকার নিল মঙ্গলবার। শুভেন্দু অধিকারী বনাম ফিরহাদ হাকিম। এদিন সকালে নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর ছিল অরাজনৈতিক সভা। সেই সভায় শুভেন্দু অনুগামী ছাড়া তৃণমূলের আর কেউ ছিলেন না। অন্যদিকে, এদিন বিকেলে নন্দীগ্রামেরই হাজরাকাটায় পাল্টা সভা ছিল তৃণমূলের। সেই সভার প্রধান আকর্ষণ ছিলেন ফিরহাদ হাকিম। তবে সেটি ছিল পুরোপুরি রাজনৈতিক সভা। সভায় উপস্থিত তৃণমূল সাংসদ দোলা সেন পরিষ্কার বলেই দেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই আমি এই সভায় যোগ দিয়েছি।’ ফলে শুভেন্দু–বিতর্কের কথা এতদিন যে ভাবে তৃণমূল নেতারা অস্বীকার করে এসেছেন, তা যে ঠিক নয়, এদিন তার প্রমাণ হয়ে যায়। আর শুভেন্দুর সভার পাল্টা সভা যে এটাই, তা–ও কার্যত স্বীকার করে নেওয়া হয় তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে।

এদিন ভারে না হোক, ধারে শুভেন্দুর সভাই ছিল প্রধান আকর্ষণ। বেলা এগারোটা নাগাদ যখন তিনি নন্দীগ্রামে পৌঁছন, তখন গোকুলনগরের গোটা সভা উপচে পড়েছিল ভিড়ে। এমনকী, সভায় আসার কয়েক কিলোমিটার আগের রাস্তা পর্যন্ত ছিল জনস্রোত। সভায় অসংখ্য মানুষের উপস্থিতি শুভেন্দুকে রীতিমতো আগ্রাসী করে তোলে। বিকেলে তৃণমূলের সভা যে তাঁর বিরুদ্ধেই হতে যাচ্ছে, তা আগেই জানতেন তিনি। তাই এদিনের মঞ্চ থেকে শুভেন্দু দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, ‘নন্দীগ্রামের মাটি পবিত্র। এই দিবসের মঞ্চও তাই পবিত্র। এটা কোনও রাজনৈতিক মঞ্চ নয়। তাই কোনও রাজনৈতিক কথা আমি এখান থেকে বলব না। তবে আমি জানি, এখানে উপস্থিত সকলেই শুনতে চান, আমি কী বলি! তাই সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সাধারণ মানুষ আমার কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু আমি রাজনীতির কথা বলার জন্য এই পবিত্র মঞ্চকে ব্যবহার করব না।’ কিন্তু উপস্থিত উদ্বেলিত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তবে হ্যাঁ, আপনাদের নিশ্চয়ই আমার কথা বলব। রাজনীতি করতে গিয়ে কোথায় আমাকে হোঁচট খেতে হচ্ছে, কোথায় আমার পথে গর্ত করা রয়েছে, কোথায় আমি স্বাচ্ছন্দ্যের অভাব বোধ করছি, সব বলব। তবে সে কথা ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরক্ষা কমিটির পবিত্র মঞ্চ থেকে বলব না। বলব রাজনৈতিক মঞ্চ থেকেই।’

যদিও কলকাতা থেকে শুভেন্দুর এমন বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। শুভেন্দুর নাম না করেই তিনি বলেছেন, ‘এ সব কথা বাস্তবের রাজনীতিতে মানায় না। এ সব কথা চলে গল্পে, উপন্যাসে। বাস্তবটা বুঝতে হবে। সেখানে স্বচ্ছতা জরুরি। স্পষ্ট কথা স্পষ্ট করেই বলতে হয়।’ অন্যদিকে, রাজনৈতিক কথা না বলেও এদিন শুভেন্দু বক্তব্য পেশ করেছেন যথেষ্ট চাঁছাছোলা ভাষাতেই। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতার দম্ভ নিয়ে আমি কোনও দিন রাজনীতি করিনি। তাই রাজনীতির দম্ভও আমার নেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই আমি সবসময় রাজনীতি করেছি। নন্দীগ্রামের মানুষ সে কথা জানে।’ রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, এ কথার মধ্য দিয়ে তিনি নিশানা করেছেন স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই। দলনেত্রীর নাম না করলেও তিনি বলেন, ‘১৩ বছরের মধ্যে সারা বছরে একবারও যাঁদের নন্দীগ্রামকে মনে পড়ে না, তাঁরাই একবার এসে এখানে বড় বড় কথা বলেন। ভোট এসেছে বলেই ১৩ বছর পর আজ অনেকের নন্দীগ্রামকে মনে পড়েছে। কিন্তু আমি তা নই। যাঁরা রাজনৈতিক কারণে এই ভূমিকে ব্যবহার করতে চান, তাঁদের সঙ্গে আমার দেখা হবে রাজনৈতিক মঞ্চেই। লড়াইয়ের মাঠেই দেখা হবে তাঁদের সঙ্গে।’ কিন্তু কেউ তৃণমূলের বিরুদ্ধে গেলেই তাঁকে নানা মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয় বলে বিরোধীদের তরফে বারবার অভিযোগ করা হয়ে থাকে। সাংসদ অর্জুন সিং থেকে সৌমিত্র খাঁ এমন অভিযোগ বহুবার করেছেন। হয়তো সেদিকে ইঙ্গিত করেই এদিন শুভেন্দু বলেন, ‘শুভেন্দু অধিকারী কাউকে ভয় পায় না। মনে রাখবেন, চেনা বামুনের পৈতের দরকার পড়ে না।’

তাৎপর্যপূর্ণ হল, এদিন তিনি ‘জয় জয় নন্দীগ্রাম’ শ্লোগানের পাশাপাশি ‘ভারতমাতার জয়’ও বলেন। উল্লেখ্য, ‘ভারতমাতার জয়’ শ্লোগান বেশি শোনা যায় বিজেপি নেতা ও কর্মীদের মুখে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, তিনি কি তা হলে বিজেপির দিকেই? বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‌তিনি কখনও বলেননি বিজেপিতে আসছেন। আগে সে কথা বলুন, তখন না হয় বিষয়টি নিয়ে ভাবা যাবে।’ এদিন শুভেন্দুর অরাজনৈতিক সভায় উপস্থিত ছিলেন শুভেন্দুর ভাই তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী, কাঁথি উত্তরের বিধায়ক বনশ্রী মাইতি, পাঁশকুড়ার বিধায়ক ফিরোজা বিবি, বিধায়ক রণজিৎ মণ্ডল প্রমুখ। আর, আশ্চর্যের বিষয় হল, শুভেন্দুর সভায় উপস্থিত থাকার পর এদিন বিকেলে হাজরাকাটায় পাল্টা তৃণমূলের সভায়ও উপস্থিত ছিলেন পাঁশকুড়ার বিধায়ক ফিরোজা বিবি। যদিও সেই সভায় তিনি শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। সেই সভায় ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু, সাংসদ দোলা সেন, বিধায়ক অখিল গিরি প্রমুখ। এই সভাতেই নাম না করে শুভেন্দুকে ‘মিরজাফরের’ সঙ্গে তুলনা করলেন ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, ‘মিরজাফর তখনও ছিল। আজও আছে। বাংলা শুধু বিশ্বাস করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই। শুধু আমি আমি করে কিছু হয় না। আমিই বড়। এটা নয়, আমরা আমরা করলেই টিকে থাকা যায়। আমি আমি হল সর্বনাশের মূল।’

ইঙ্গিতবহ ভাবে তিনি বলেন, ‘একা একা থাকলে আর শক্তি থাকবে না।’ তিনি বলেন, ‘সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, ভাঙড় আন্দোলনের কথা বললে অবশ্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা বলতে হয়। অবশ্যই এগুলি মানুষের আন্দোলন, তবে কাণ্ডারী অবশ্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’ রাজনীতি পর্যবেক্ষকদের মতে, এ কথার মধ্য দিয়ে ফিরহাদই কার্যত শুভেন্দুর সঙ্গে মমতার সরাসরি লড়াই লাগিয়ে দিলেন। শুভেন্দুর বলা আগের দিনের প্যারাশুট, হেলিকপ্টারের জবাবও ফিরহাদ এদিন দিয়েছেন। বলেছেন, ‘আমরা কেউই হেলিকপ্টারে উড়ে আসিনি বা প্যারাশুটে নামিনি। আমরা সিঁড়ি দিয়েই প্রত্যেকে উঠেছি। আর সেই সিঁড়ি তৈরি করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’ তবে এদিন ফিরহাদ হাকিমের কথার বিরোধিতা বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেই করেছেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি বলেছেন, ‘‌মুর্শিদাবাদে আমাকে হারাতে শুভেন্দুকে পাঠিয়েছিলেন মমতা। আমার সঙ্গে শুভেন্দুর সম্পর্ক যে কেমন, তা সবাই জানেন। তবু বলব, শুভেন্দুই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নন্দীগ্রামের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।’ অধুনা বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি মুকুল রায় বলেছেন, ‘নন্দীগ্রামে সভা বরাবরই করত শুভেন্দু। তৃণমূলের কেউ সেখানে সভা করতে যেত না। পাল্টা সভা করে ওরাই সকলের কাছে খেলো হয়ে গিয়েছে।’ লক্ষণীয় হল, বিশালতার কথা বলা হলে, শুভেন্দুর সভার তুলনায় ফিরহাদ হাকিমদের সভা ছিল যেন অনেকটা পথসভার মতোই।

এদিন ফিরহাদ হাকিমের আক্রমণের জবাবে শুভেন্দু অধিকারী কোনও মন্তব্য করেননি। তবে নন্দীগ্রাম আন্দোলন নিয়ে মুখ খুলেছে বিজেপিও। এদিন বাঁকুড়ায় বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ বলেছেন, ‘নন্দীগ্রামে তৃণমূল কোনও আন্দোলনই করেনি। মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন মমতা। আন্দোলন করেছিল ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি। তাদের নেতা ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর হাত থেকে আন্দোলনকে হাইজ্যাক করে নিয়ে নিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক মহলের মতে, নন্দীগ্রামে এদিনের সভার পর শুভেন্দু অধিকারী লক্ষ্মণ রেখার বাইরে চলে গিয়েছেন। এখন আর তাঁর যেমন পিছিয়ে যাওয়ার উপায় নেই, তেমনই তৃণমূলেরও তাঁকে মেনে নেওয়ার পথ কার্যত বন্ধই হয়ে গিয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..